‘রিলিজিয়ন’ ধারণার ইতিহাসঃ একটি ভূমিকা*।। ব্রেন্ট নংব্রি ।। অনুবাদঃ জাকারিয়া হোসাইন
আমার বাবা ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের খাসি পাহাড়ে বড় হয়েছেন। এখনকার সময়ে মেঘালয় রাজ্যের বড় জোর ১০ লক্ষ মানুষ খাসি ভাষায় কথা বলে। আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন মাত্রই রিলিজিয়ন বিষয়ক পড়াশুনার জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া শুরু করি, একদিন খেয়াল করি খাসি ভাষায় ‘রিলিজিয়ন’ বুঝায় এমন কোনো শব্দ আছে কিনা সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নাই। আমার কাছে একটা ছোট খাসি ভাষা থেকে ইংরেজী ভাষার অভিধান ছিলো, কিন্তু এর মধ্যে ইংরেজী থেকে খাসি শব্দার্থ ছিলো না। বিভিন্ন প্রজেক্ট শেষ করার সময়সীমার মধ্যে থাকায় আমি তখনই ঐ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু করি নাই এবং দ্রুতই তা ভুলে যাই। কিন্তু কিছু বছর পরে, বাবার সাথে আলাপের সময় যখন এই বিষয়টা সামনের উঠে আসে, আমি তাকে রিলিজিয়নের খাসি ভাষার শব্দ জানতে চাই। তিনি ‘কা নিয়ম’ (ka niam) শব্দটা বলেছিলেন। এর মধ্যে আমার রিলিজিয়াস স্টাডিজে স্নাতক শেষ হয়েছিল, এবং আমি এই শব্দটা সম্পর্কে আরো অনুসন্ধান করতে আগ্রহী ছিলাম। আমি আমার ছোটো অভিধানটি ঘাটা শুরু করি। আমি দেখি যে এটা সাধারণভাবে ‘প্রথা’ও (custom) বুঝায় অর্থাৎ এটা আবশ্যিকভাবে এমনকিছু না যা নির্দিষ্ট বা বিশেষভাবে রিলিজিয়াস। আরো ভুরু কুচকানো ব্যাপার, ঐ শব্দের পাশের তারকা চিহ্নটি আমাকে পৃষ্ঠার নিচের অংশের ছোটো নোটে নিয়ে যায়, সেখান থেকে দেখা যায় niam সরাসরি খাসি কোনো শব্দ নয়, বরং এটি বাংলা শব্দ ‘নিয়ম’ থেকে ধার করা একটা শব্দ বা ধারণা। ফলে, দেখতে পাই আমার বাবার ভাষায় ‘রিলিজিয়ন’ এর কোনো স্থানীয় শব্দ বা প্রতিশব্দ ছিলো না।১
গত দুই শতাব্দী যাবৎ, বিদ্যায়তনিক বা একাডেমিক জ্ঞান ও প্রচলিত চিন্তা ধারায় ধারণা করা হয়েছে যে ‘রিলিজিয়ন’ একটি বিশ্বজনিন ব্যাপার এবং মানুষের অভিজ্ঞতার একটি ‘সহজাত’ অংশ যা আবার সকল সংস্কৃতি ও ইতিহাস জুড়ে আবশ্যিকভাবে একইরকম। একেকটা রিলিজিয়ন হয়তো সময় এবং ভৌগলিকভাবে বিভিন্ন রকমের হতে পারে- এভাবেই বলা হয়, যার মানে দাঁড়ায় আমরা যাকে রিলিজিয়ন বলি এটা এমন একটা উপাদান যেটিকে সকল সংস্কৃতি ও কাল পর্বেই পাওয়া যাবে। পরিচিতিমূলক বইগুলি আমাদের সাধারণ থেকে শুরু করে, স্বীকারোক্তিমূলক সংজ্ঞা (ঐশ্বরিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস), আরো বেশি সার্বজনিন শুনায় এমন (পরম সত্ত্বা/চূড়ান্ত চেতনায় বিশ্বাস) বহু ধরণের সংজ্ঞা দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু তারা যেভাবেই একে সংজ্ঞায়িত করুক না কেনো, এই বইগুলা আমাদের এরকম নিশ্চয়তা দেয় না/আশ্বস্ত করে না যে রিলিজিয়নের প্রতিষ্ঠান বিশ্বজনীন/সর্বত্র বিদ্যমান। এই বিশ্বজনীনতা/সর্বব্যাপিতা ভিন্ন ব্যখ্যার ইঙ্গিত দেয়। কিছু ধর্ম (রিলিজিয়ন) মতের অনুসারীরা দাবী করেন, দুনিয়ায় অনেক মিথ্যা ধর্মমত (রিলিজিয়নস) রয়েছে কিন্তু ইতিহাসের কিছু মূহুর্তে রিলিজিয়নের ‘সত্য’ রূপ প্রকাশিত হয়েছে। ইদানীংকালে এটা আরো বেশি সাধারণ কথায় পরিণত হয়েছে যে সকল রিলিজয়ন (অথবা অন্তত সকল রিজিয়নের ‘ভালো উপাদানগুলি) একটা নির্দিষ্ট অলৌকিক(transcendent) বাস্তবতাকে নির্দেশ করে যার মধ্যে সকল মানুষের প্রবেশাধিকার (access) আছে। অথবা, বিজ্ঞানী সমাজের কিছু সংখ্যক লেখক এই যুক্তি দেন যে এটা সম্ভব রিলিজিয়ন সাধারণভাবে, ভালো হোক মন্দ হোক, হোমো স্যাপিয়েন্সের মস্তিকের একটি বিবর্তনীয় অভিযোজন বা সমন্বয়। মতভেদ থাকলেও একটা জায়গায় এনারা এক, মানুষ যখন প্রথম মানুষ(!) হয়ে ওঠে সেই সময়কাল থেকেই রিলিজিয়ন একটা প্রদত্ত বিষয়, যা সকল সংস্কৃতিতে কোনো না কোনো ভাবে বর্তমান আছে।
গত ত্রিশ বছর ধরে, এই ধারণাগুলিকে বিভিন্ন বিদ্যায়তনিক বা একাডেমিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা অব্যাহতভাবে পর্যালোচনা করছেন। তারা পর্যবেক্ষণ করেছেন ‘প্রাচীন’ কোনো ভাষাতেই এরকম কোনো শব্দ নেই যা দিয়ে ‘আধুনিক’ মানুষের ব্যবহৃত রিলিজিয়ন শব্দটিকে বুঝায়। তারা এটি চিহ্নিত করেছেন- যে সমস্ত শব্দ ও ধারণা রিলিজিয়নকে বুঝায় সেগুলা অ-পশ্চিমা সংস্কৃতিগুলোর বিদ্যায় ছিলো না, যতদিন না পর্যন্ত এই সংস্কৃতিগুলোর সাথে ইউরোপীয় ক্রিশ্চিয়ানদের মোলাকাত হয়। তারা এটা দেখিয়েছেন পুরোনো রিলিজিয়নগুলোর নামগুলোকে সাম্প্রতিক ইতিহাসেই কেবল খুঁজে পাওয়া যায় (উদাহরণস্বরূপ, ‘হিন্দুইজম’(ক) ১৭৮৭ এবং ‘বুদ্ধিজম’ ১৮০১)। প্রাচীন নানা শব্দ থেকে আসা নামগুলির ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই, ধারণাগত শব্দ হিসেবে বিবেচনা না করে বরং ব্যাপারগত, ব্যবহারগত দিক বিবেচনা করেই ঐ সব নাম, শব্দ ও শব্দার্থ ভালো বোঝা যায়, যেমন- প্রাচীন গ্রীক ধারণা ioudaismos বলতে “the religion of Judaism” বুঝাতো না বরং ইহুদি জাতিসত্ত্বার (ethnicity) সাথে সম্পর্কিত চর্চাগুলোকে বুঝাতো; আরবিতে ইসলাম বলতে “the religion of Islam” বুঝাতো না বরং “নিজেকে সমর্পন” বুঝাতো। আরো সাধারণভাবে বলতে গেলে, এটা আরো পরিষ্কার হয়েছে যে জীবনের একটি অংশ হিসেবে রিলিজিয়নকে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু হিসেবে দেখাটা মানুষের ইতিহাসের কোনো বিশ্বজনীন বৈশিষ্ট্য নয়। আসলে, মানুষের সংস্কৃতিকে বিস্তৃতভাবে দেখলে এটা পৃথিবীকে কল্পনা করার খুবই উদ্ভট রাস্তা। ‘প্রাচীন’ দুনিয়ায় দেবতারা (gods) জীবনের সকল ক্ষেত্রে জড়িত ছিলেন। যাইহোক, তার মানে এই না যে সমস্ত প্রাচীন মানুষ কোনো না কোনোভাবে ‘রিলিজিয়াস’ ছিলেন, বরং ‘রিলিজিয়াস’ ও ‘সেক্যুলার’ বলে আলাদা করার ব্যাপারটাই সাম্প্রতিক। ‘প্রাচীন’ মানুষেরা দুনিয়াকে এভাবে ভাগ করেন নাই।
রিলিজিয়াস স্টাডিজের একাডেমিক পড়াশুনার ক্ষেত্রে, ‘রিলিজিয়ন’ যে একটা ‘আধুনিক’ আবিষ্কার সেটাই আসল খবর নয়। এই বিষয়ে ইংরেজী ভাষায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং এখনো পর্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী Wilfred Cantwell Smith এর বই The Meaning and End of Religion: A New Approach to the Religious Traditions of Mankind যেটি ১৯৬৩ সালে প্রথম প্রকাশিত এবং সর্বশেষ ১৯৯১ সালে পুনঃপ্রকাশিত হয়। স্মিথের বিখ্যাত মতটি ছিল, আমাদের ‘রিলিজিয়ন’ শব্দটিকে ব্যবহার করাই বাদ দেয়া উচিত কারণ এটি খাঁটি বা প্রকৃত রিলিজিয়াস অনুভূতির চাইতে একটা সিস্টেমকেই বেশি বুঝায়।
এইক্ষেত্রে তিনি ‘বিশ্বাস’(faith) ধারণা বা প্রত্যয়টিকে ব্যবহার করার পক্ষে মত দিয়েছেন, যেটি তার মত অনুযায়ী বিশ্বজনীন ছিল এবং সমস্ত মানুষের প্রকৃত রিলিজিয়াস অনুভূতিকে বুঝায়। তার চিন্তার অংশ হিসেবে, তিনি ধর্মের একটি ইতিহাসকে বর্ননা করেছেন “reification” ধারণা দিয়ে, যেটা হলো- “মানসিকভাবে রিলিজিয়নকে একটি একক বিষয় হিসেবে চিন্তা করা এবং ধীরে ধীরে এটিকে একটি নৈর্ব্যক্তিক পদ্ধতিগত বিষয় হিসেবে ধারণ করা”৪ স্মিথ’র মত একজন সমর্পিত খ্রিষ্টান যিনি রিলিজিয়াস বহুত্ববাদীতার প্রতি আন্তরিক আগ্রহ রাখেন, তার মতে এই reification প্রক্রিয়াটি একটি নিরপেক্ষ বিকাশ ছিল নাঃ
“এই পর্যন্ত অবশ্যই পরিষ্কার এবং গুরুত্বপূর্ণঃ পৃথিবী ও তার ইতিহাস জুড়ে ‘রিলিজিয়ন’ বলে একটি বিশেষ ধারণা এবং এই ধারণাটি যা অর্থপ্রকাশ করে তার বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যালোচনা এবং সাহায্য ছাড়াই মানুষ রিলিজিয়াস থাকতে সক্ষম হয়েছে। আসলে, কোনো না কোনোভাবে আমার এমন অনুভূতি হয়েছে, হয়তো এই ধারণার সংস্পর্শ ছাড়াই রিলিজিয়াস থাকাটা সহজতর; রিলিজয়নের ব্যবস্থা বা পদ্ধতিই ভক্তি বা ধার্মিকতার একটি শত্রুতে পরিণত হতে পারে… এটা বললে হয়তো একদম বোকার মত শুনাবে না যে ‘রিলিজিয়ন’ ধারণার উত্থান ও বিকাশ রিলিজিয়ন চর্চার ক্ষয়ের সাথে কোনো না কোনোভাবে জড়িত।”৫
যেখানে স্মিথ ‘রিলিজিয়ন’ ধারণাটিকেই অব্যাহতি দিতে প্রস্তুত ছিলেন, সেখানে গোটা ইতিহাস জুড়ে মানুষ ‘রিলিজিয়াস থাকতে’ সক্ষম হয়েছিল বলতে তার কোনো সংশয় নাই। শতাব্দীর পথ ধরে এ রিলিজিয়াসনেস যেভাবে পদ্ধতিগতভাবে একধরণের ব্যবস্থা হিসেবে রিলিজয়নে পরিণত হয়েছে তা তার কাছে অসুবিধাজনক মনে হয়েছে। রিলিজিয়াস স্টাডিজ পড়াশুনার ক্ষেত্রে অনেকে এই বিষয়ে স্মিথের নেতৃত্বকে অনুসরণ করেছেন।
রিলিজিয়ন ধারণার ইতিহাস প্রসঙ্গে আমার প্রাথমিক কৌতুহলের একটা বড় অংশই ‘The Meaning and End of Religion’ বইটা এক যুগেরও বেশি আগে প্রথমবার পড়ে জেগেছিল। এখন পর্যন্ত, আমি এই চিন্তায় এসেছি যে reification এর উপর স্মিথের যে মনোযোগ, যা রিলিজিয়াস স্টাডিজের ক্ষেত্রে অনেকের আছে,তা যতটা না চিন্তাকে স্পষ্ট বা পরিষ্কার করে তার চাইতে বেশি অস্পষ্ট বা ঘোলাটে করে ফেলে। সর্বোপরি, ‘প্রাচীন’ মানুষদের কাছে ‘ধারণা’ ছিল, তারা ব্যবস্থা বানাইছেন। আসল সমস্যাটা হলো ‘রিলিজিয়ন’-এর নির্দিষ্ট ধারণাটি ‘প্রাচীন’ দুনিয়ায় অনুপস্থিত ছিলো। ‘রিলিজিয়াস হওয়া’র ধারণাটাই আরেকটা সহযোগী ধারণার চাহিদা প্রকাশ করে যে তাহলে ‘রিলিজিয়াস না হওয়া’ বলতে কি বুঝায়, এবং এইভাবে দ্বিবিভাজন করে চিন্তা করা ‘প্রাচীন’ দুনিয়ার অংশ ছিলো না। নিশ্চিত হওয়ার জন্য, প্রাচীন মানুষের দেবতাগণের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা জানানোর শব্দ ছিল, কিন্তু সেই শব্দগুলোকে আজকে আধুনিক লোকেরা যেভাবে শুধুমাত্র ‘রিলিজিয়াস’ বলে নির্দিষ্ট করে ফেলে সেরকম ছিলো না। এ শব্দগুলো সাধারণত সামাজিক যোগাযোগে ব্যবহৃত শব্দাবলিরই একটা অংশ ছিল। উদাহরণ হিসাবে, গ্রীকে eusebeia শব্দটিকে দেবতাগণের প্রতি সঠিক ভঙ্গি ধারণ করাকে বুঝাতো, এটির বিপরীত শব্দ ছিলো asebeia, যা দিয়ে ভুল ভঙ্গিকে বুঝাতো। এমন শব্দগুলা শুধুমাত্র দেবতাদের সাথেই সম্পর্কিত ছিলো না। এগুলা বিভিন্ন ধরণের সামাজিক ও শ্রেণীগত রীতি- নীতিকেও নির্দেশ করতো। প্লেটো তার রিপাবলিক বইয়ের উপসংহারে যারা “দেবতাগণ ও পিতামাতার প্রতি”৭ eusebeia দেখাবে তাদেরকে পুরষ্কার ও যারা asebeia দেখাবে তাদের শাস্তি দেয়ার উপর জোর দিয়েছেন। একজন আদর্শ রোমান “আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি” eusebeia মনোভাব ধারণ করতেন। ‘রিলিজিয়নস’ এবং ‘রিলিজিয়াস হওয়া’ এই ধারণাগুলোর আধুনিক রূপটা ঠিক কি, যা একটা জিনিসকে ‘রিলিজিয়াস’ আবার অন্য আরেকটা জিনিসকে ‘ রিলিজিয়াস না’ বলে আলাদা করতে ও নাম দিতে পারে?
নৃবিজ্ঞানি তালাল আসাদ রিলিজিয়নের আধুনিকতাকে যেভাবে চিহ্নিত করেছেন সেটাকে আমার স্মিথের আলাপের চাইতে বেশি সহায়ক মনে হয়েছে। “আমি বলবো ‘রিলিজিয়ন’ যে একটা আধুনিক ধারণা তা এ কারণে নয় যে এটাকে কল্পনার মধ্যে থেকে বাস্তবে পরিণত করা হয়েছে বরং এটিকে এর জমজ প্রতিশব্দ ‘সেক্যুলারিজম’র সাথে সম্পর্কিত করা হয়” ৮। রিলিজিয়ন এবং সেক্যুলারিজমের ধারণার যুগপৎভাবে একই সময়ে জন্ম হওয়াটাই মনোযোগ আকর্ষণ করে। আমি জোর দিয়েই বলতে চাই, আমি তথাকথিত যে সেক্যুলারাইজেশন ধারণা (কিভাবে ‘সেক্যুলারিজম’ বলতে কিছু একটা রিলিজিয়াস জগতে ঢুকে পরে এবং ধীরে ধীরে রিলিজিয়নকে উৎখাত করে চলেছে যতক্ষণ না পর্যন্ত বিশ শতকের কোন একটা সময়ে রিলিজিয়ন একটি পুনর্জাগরণের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে) তাতে আগ্রহী নই। এর বদলে বইটি কীভাবে আমরা ‘সেক্যুলার’ বনাম ‘রিলিজিয়াস’ আলাপের সামনে হাজির হলাম সেই বিষয়টা চিহ্নিত করেছে। এই শব্দ দুটি ল্যাটিন ভাষা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, এবং প্রাচীন শব্দগুলি একটা দ্বৈততার ইঙ্গিত করলেও, তা সাধারণত এখন যেভাবে আধুনিক সেক্যুলার/ রিলিজিয়াস দ্বৈততাকে বুঝায় সেভাবে বুঝাতো না। মধ্যযুগের ল্যাতিন (এমনকি প্রথমদিকের ইংরেজীতেও), এই শব্দগুলো বিভিন্ন ধরণের খ্রিষ্টান যাজকবর্গকে বুঝাতো, খ্রীষ্টীয় আশ্রমের সদস্যদের রিলিজিয়াস এবং আশ্রমের সাথে যুক্ত নন এমন সংসারী যাজকদের বুঝাতে সেক্যুলার শব্দটি ব্যবহৃত হত (যা এখনও ক্যাথোলিকদের মাঝে ব্যবহৃত হয়)। ৯
এটা ভাবা ঠিক হবে না যে প্রাচীন সংস্কৃতিগুলোর পবিত্র বনাম অপবিত্র এবং শুদ্ধ বনাম অশুদ্ধ এই দ্বৈততাগুলো আধুনিক “রিলিজিয়াস” এবং “সেক্যুলার” এর পার্থক্য করার সাথে তুলনীয়। উদাহরণ হিসেবে, রোমান মন্দিরগুলো ‘পবিত্র’ জায়গা হিসেবে বিবেচিত ছিলো, কিন্তু সেখানে বিস্তৃত বৈচিত্র্যের কার্যাবলি অনুষ্ঠিত হতো, যার অনেককিছুকেই আধুনিক লোকেরা ‘রিলিজিয়াস’ হিসাবে ধরবে না। রোমান দুনিয়ায় একদিকে মন্দিরগুলা বিভিন্ন উৎসব ও দেব- দেবতাগণের প্রতি উৎসর্গ করার জায়গা হিসেবে নিবেদিত ছিলো। আবার এগুলাই ‘সরকারি’ লোকদের দেখা করার ও আলাপের জায়গা, আইনি দলিলের সংরক্ষণাগার, ব্যাংক, বাজার, পাঠাগার এবং জাদুঘর হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।১০ এমনকি প্রাচীন যে বিবৃতিগুলাকে আধুনিক লোকেরা রিলিজিয়াস/ সেক্যুলার ভাগের স্ব-প্রমাণিত উদাহরণ হিসাবে প্রচার করে (যেমন, “Render unto Caesar the things that are Caesar’s, and unto God the things that are God’s”) তাকেও প্রাচীন লোকেরা একেবারেই ভিন্নভাবে পাঠ করেছে বলে মনে হয়। সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্ন জাগে, কখন ও কীভাবে মানুষ দুনিয়াকে আধুনিক অর্থে সেক্যুলার এবং রিলিজিয়াস এ বিভাজনে ভাবা শুরু করেছে এবং রিলিজিয়াস জগতকে বিভিন্ন স্বতন্ত্র রিলিজিয়নস(তথাকথিত বিশ্বধর্মের-খ) এর সাপেক্ষে বিভক্ত করেছে।
আসাদের পরামর্শ অনুযায়ী, রিলিজিয়ন এবং সেক্যুলারিজমের ধারণাকে ‘সংযুক্ত জমজ’ ( conjoined twins) ধারণা হিসেবে ভাবা একইসাথে সহায়ক এবং সমস্যাজনক। এ রূপকটি রিলিজিয়ন এবং সেক্যুলারিজমের পারস্পরিক নির্ভশীলতার উপর জোর দেয় এবং শিশু জন্ম হওয়ার রূপকটিও সহায়ক কারণ একটি জন্ম একটি নির্দিষ্ট সময় ও স্থানেই ঘটে। যদিও সকল রূপকের মতই, এটিরও সীমাবদ্ধতা আছে। ইতিহাসের আলাপ হিসেবে এটা পরিষ্কার করে বলা খুব কঠিন- যে কেউ একজন ইতিহাসের এমন একটা নির্দিষ্ট মুহুর্তকে আলাদা করতে পারবে যখন রিলিজয়নের মত কিছু একটা ‘জন্ম’ নিয়েছিল। তবে আমি মনে করি, কেউ একজন একটা নির্দিষ্ট সময়কাল এবং ঐতিহাসিক পটভূমিকে চিহ্নিত করতে পারবে যার মধ্য দিয়ে রিলিজিয়ন ও আধুনিক সেক্যুলার জাতিরাষ্ট্র চেহারা পেয়েছে এবং এ দুনিয়া ধারণাগতভাবে বিভিন্ন রিলিজিয়নে ভাগ হয়েছে।
প্রোটেস্টান্ট পুনর্গঠনের জাগরণের মধ্য দিয়ে, যেহেতু কিছু প্রোটেস্টান্ট গ্রুপ সমগ্র ইউরোপজুড়ে পোপের কতৃত্বকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নের মুখে ফেলার জন্য যথেষ্ট রাজনৈতিক সমর্থন জড়ো করতে সক্ষম হয়, ফলে খ্রিষ্টধর্মের কোন রূপটি সঠিক এ নিয়ে পুরাতন তর্কগুলি একটি নতুন গতি পায়। এ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় যা এখন Wars of Religion বলে পরিচিত। যেহেতু এই দ্বন্দ থেকে কেবল রক্তই ঝড়ে নাই একইসাথে ব্যবসা বাণিজ্যও ব্যহত হয়েছিল, বিখ্যাত লোকেরা যেমন জন লক খ্রিষ্টধর্মের কোন রূপটি সঠিক এই তর্কের মীমাংসার মধ্য দিয়ে জনরাষ্ট্রের স্থিতি অর্জন সম্ভব নয় বরং ঈশ্বর বা স্রষ্টা বিষয়ক বিশ্বাসকে ব্যক্তিগত পরিসরের অংশ হিসেবে আলাদা করে, ঈশ্বর বা স্রষ্ট্রার প্রতি আনুগত্যের বদলে উঠতি জাতিরাষ্ট্রগুলোর শাসনতান্ত্রিক আইনগুলোর প্রতি আনুগত্যের মধ্যে দিয়ে সম্ভব বলে মত দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের মধ্যেকার এই প্রাদেশিক বিতর্কই আমেরিকা, আফ্রিকা এবং অন্যান্য জায়গায় ইউরোপীয় অভিযাত্রা ও উপনিবেশিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একটা বৈশ্বিক রুপ নিয়েছিল। ইউরোপীয়রা যে ‘নতুন মানুষ’দের আবিষ্কার করেছিল তারা আন্তঃখ্রিষ্টান সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্বের রসদে পরিণত হয়। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টবাদের কোন রূপটি সঠিক তা প্রমাণের জন্য প্রতিদ্বন্দী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে আমেরিকা ও আফ্রিকায় নতুন আবিষ্কৃত ‘অসভ্য’ লোকদের উপাসনা পদ্ধতির তুলনাকে উদাহরণ হিসাবে টানতো। পৃথিবীর নানান প্রান্তে নতুন আবিষ্কৃত মানুষদেরকে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্বের আলোকে ব্যাখা করার চেষ্টাকে ইতিহাসবিদ পিটার হ্যারিসন “the projection of Christian disunity onto the world” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।১২ এই প্রজেকশনই বিশ্বধর্মের কাঠামো গঠনের ভিত্তি দিয়েছিল যা এখন বর্তমানে রিলিজিয়ন বিষয়ক একাডেমিক ও সাধারণ আলোচনার উপর কতৃত্ব করেঃ কীভাবে মুক্তি অর্জন সম্ভব তা নিয়ে এ বিশ্ব বিভিন্ন এবং অনেকটাই প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বাসে বিভক্ত এবং জন লকের মত প্রভাবশালী ব্যাক্তির মত অনুযায়ী, এই বিশ্বাসগুলি আদর্শিকভাবে ব্যক্তিগত, আত্মিক(spiritual) এবং অরাজনৈতিক থাকা উচিত। ষোল ও সতের শতাব্দীর এই নির্দিষ্ট পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে রিলিজিয়নের যে ধারণা আমরা জানি তার সূত্রপাত হয়।‘
এই প্রাথমিক গল্পটি বিভিন্ন ঐতিহাসিক, নৃবিজ্ঞানী, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ এবং আরো অনেকের কাজের মধ্যে দিয়ে কিছুটা এলোমেলোভাবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।১৩ বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্বকে তারা যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তা অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ এবং মনোযোগ আকর্ষণ করে। এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন একাডেমিক পরিসরে ‘রিলিজিয়ন’ যে ইতিহাসে একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কার, আলাপের এই পদ্ধতিটি অন্তর্ভুক্ত হওয়া স্বত্ত্বেও, এখনো পর্যন্ত পন্ডিতজনরা ‘রিলিজিয়ন’ শব্দটাকে এমন সাধারণভাবে ব্যবহার করেন যেনো সকল সংস্কৃতির মানুষদের কাছে শব্দটি একটা বিশ্বজনীন ধারণা হিসেবে পরিচিত। আমার নিজস্ব বিশেষজ্ঞতার এলাকায়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পড়াশোনা করতে গিয়ে দেখি প্রতিবছরই ‘প্রাচীন গ্রীক রিলিজিয়ন’ ধরণের প্রচুর বই প্রকাশিত হয় যা অনায়াসে একটা ছোটো লাইব্রেরিতে এটে যাবে। এই অবস্থার একটা কারণ ‘রিলিজিয়ন’ ধারণার বিকাশ সম্পর্কে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিশ্লেষণ না থাকা। এই বইটি বহুমূখি গবেষণার ক্ষেত্র থেকে পাওয়া ফলাফলকে একত্রিত করে রিলিজিয়ন ধারণা সম্পর্কে একটা (একমাত্র নয়) ইতিহাসের ধারণা দেবে। প্রথমত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়- ‘রিলিজিয়ন’- এর অবশ্যই একটা ইতিহাস আছেঃ এটা প্রাচীন সংস্কৃতিগুলোর কাছে স্থানীয় চিন্তায় উদ্ভুত কোনো ধারণা ছিল না। জীবনের একটা ক্ষেত্র হিসেবে রিলিজিয়নকে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান থেকে আলাদা করে দেখার ধারণাটা ইউরোপীয় ইতিহাসের একটি সাম্প্রতিক বিকাশ, এবং এ ধারণাটি স্থান ও কালের ভেতর দিয়ে পরিগঠিত হয়ে বর্তমান দুনিয়ায় একটা স্বাভাবিক এবং অত্যাবশ্যকীয় অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে, গভীরভাবে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান চালালে, এই আবির্ভাবটির উপরে থাকা পাতলা আবরণের ছদ্মবেশটি সহজেই মিলিয়ে যাবে।
সম্পাদনাঃ অরূপ রাহী। প্রুফ সম্পাদনাঃ হাসিবুল হাসান শান্ত।
*Before Religion : A History Of A Modern Concept বইয়ের ভূমিকার আংশিক অনুবাদ ।
সুত্রঃ Before Religion : A History Of A Modern Concept. Brent Nongbri, Yale University Press.2015.
অনুবাদের নোটঃ
ক) হিন্দুইজম শব্দের হিন্দু শব্দটি এসেছে (পার্সিয়ান হয়ে) সংস্কৃত শব্দ সিন্ধু (ঐতিহাসিক স্থানীয় সিন্ধু নদী বা ইন্ডাস্ রিভার) থেকে। পার্সিয়ান ভৌগোলিক পরিভাষায় এ শব্দটি দিয়ে সিন্ধু নদীর পাশে বসবাসকারী লোকেদের বোঝানো হতো। শব্দটি দিয়ে তখন ভৌগোলিক অবস্থান ও তৎসংলগ্ন সবকিছুকেই বোঝানো হতো এবং এর দ্বারা কোন ‘ধর্ম’কে বোঝানো হতো না।
খ) World religions is a category used in the study of religion to demarcate the five—and in some cases six—largest and most internationally widespread religious movements. Christianity, Islam, Judaism, Hinduism, and Buddhism are always included in the list, being known as the “Big Five”. Some scholars also include another religion, such as Taoism, Sikhism, Zoroastrianism, or the Bahá’í Faith, in the category. These are often juxtaposed against other categories, such as “indigenous religions” and “new religious movements”, which are also used by scholars in this field of research.)
লেখকের নোটঃ
১. Linguists classify Khasi as part of the Mon- Khmer branch of the family of Austro- Asiatic languages (the Bengali language, on the other hand, is classified as Indo- Aryan). It is unclear when the term niam entered the Khasi vocabulary and when it came to be used as an equivalent for “religion,” since Khasi seems to have had no stable written form until the early nineteenth century, when British and Bengali Christian missionaries began to produce tracts in the Khasi language written in Bengali characters. By the middle of the nineteenth century, Presbyterian mis- sionaries had begun a concerted effort to print Christian materials in Khasi using Roman characters, which eventually became the standard format for written Khasi. For a concise discussion of the history of the language, see I. M. Simon, “The Khjsi Language: Its Development and Present Status,” Contributions to Asian Studies 11 (1978): 167– 80. On the classification of Khasi, see Paul Sidwell, Classifying the Austroasiatic Languages: History and State of the Art (Munich: Lincom Europa, 2009),98– 106.
২. For a brief summary and important critique of recent efforts to study religion and human evolution, see Maurice Bloch, “Why Religion Is Noth-ing Special But Is Central,” Philosophical Transactions of the Royal Society B 363 (2008): 2055– 61.
৩. In French, one may turn to Michel Despland, La religion en occident: Évolution des idées et du vécu, repr. ed. (Montreal: Fides, 1988 [1979]), who examines the concept of religion in a large number of authors from the standpoint of the philosophy of religion. Ernst Feil’s monumental Religio: Die Geschichte eines neuzeitlichen Grundbegriffs, 4 vols. (Göttingen: Vanden- hoeck and Ruprecht, 1986– 2007), proceeds in a fashion similar to Des-pland’s book but in a much more thorough way and has all the benefi ts and drawbacks of its genre— the multivolume German magnum opus. In Italian, related topics are treated in Dario Sabbatucci, La prospettiva storicoreligiosa: fede, religione e cultura (Milan: Saggiatore, 1990).
৪. Wilfred Cantwell Smith, The Meaning and End of Religion: A New Approach to the Religious Traditions of Mankind, repr. ed. (Minneapolis, Minn.: Fortress, 1991 [1963]), 51.
৫. Ibid., 19.
৬. The reference is to Plato, Republic 615c (eis de theous asebeias te kai eusebe-
ias kai goneas); translation and italics are my own. I cite from the edition of S. R. Slings, Platonis Rempublicam (New York: Oxford University Press, 2003).
৭. The reference is to the historian Dionysius of Halicarnassus, who lived in the fi rst century B.C.E., in his Roman Antiquities 8.44 (tws pros to genos eusebeias). I cite from the edition of Cary in the Loeb Classical Library,The Roman Antiquities of Dionysius of Halicarnassus, 7 vols. (London:William Heinemann, 1945). It is perhaps not surprising that this termof proper regard for social hierarchies is most often translated into
Latin as pietas, and it appears parallel to dharma in the inscriptions of the Indian ruler Ashoka (third century B.C.E.). See the Greek text edited by G. Pugliese Carratelli et al., A Bilingual Graeco- Aramaic Edict by Asoka: The First Greek Inscription Discovered in Af ghanistan (Rome: Istituto Italiano per il Medio ed Estremo Oriente, 1964).
৮. Talal Asad, “Reading a Modern Classic: W. C. Smith’s The Meaning and End of Religion,” History of Religions 40 (2001): 205– 22. The remainder of Asad’s quotation is dense but bears repeating: “Religion has been part of the restructuration of practical times and spaces, a rearticulation of practical knowledges and powers, of subjective behaviors, sensibilities,needs, and expectations in modernity. But that applies equally to secularism, whose function has been to try to guide that rearticulation and to define ‘religions’ in the plural as a species of (non- rational) belief. . . .Secularist ideology, I would suggest, tries to fi x permanently the social and po liti cal place of ‘religion’ ” (221).
৯. See the discussion in Jan N. Bremmer, “Secularization: Notes toward a Genealogy,” in Religion: Beyond a Concept, ed. Hent de Vries (New York: Fordham University Press, 2008), 432– 37.
১০. See John E. Stambaugh, “The Functions of Roman Temples,” Aufstieg und Niedergang der römischen Welt 2.16.1 (1978): 554– 608.
১১. See Matt. 22:15– 22, Mark 12:13– 17, Luke 20:20– 26, and Logion 100 in the Gospel of Thomas. Among early Christians, the passages from the canonical gospels were sometimes read in light of 1 Tim. 2:1– 2. According to the Christian teacher Justin Martyr, who wrote in Rome in the middle of the second century, Caesar was entitled not only to taxes, but also to prayers to the Christian god on the emperor’s behalf. Alterna-
tively, in the fourth century, Ambrose of Milan understood the passage to be an exhortation to give up all property and take up an ascetic life. For easy reference, see the sources gathered in Arthur Just, Jr., Ancient Christian Commentary on Scripture: Luke (Downers Grove, Ill.: InterVar-
sity, 2003), 310– 11.
১২. Peter Harrison, “Religion” and the Religions in the English Enlightenment (Cambridge: Cambridge University Press, 1990), 174.
১৩. For the moment, I will simply provide a list of authors whose work on the
development of the concept of religion I have found especially helpful
(individual works will be noted in the course of the book): Talal Asad, Jan Bremmer, William T. Cavanaugh, David Chidester, Michel Despland, Ernst Feil, Timothy Fitzgerald, Peter Harrison, Richard King, Craig Martin, Tomoko Masuzawa, Russell McCutcheon, Jonathan Z.Smith, Wilfred Cantwell Smith, Guy Stroumsa, and Sarah Thal. Three other projects have been less infl uential, but they still ought to be mentioned in this context: S. N. Balagangadhara, “The heathen in his blindness”: Asia, the West, and the Dynamic of Religion (Leiden: Brill, 1994); Daniel Dubuisson, The Western Construction of Religion: Myths, Knowledge, and Ideology, trans. William Sayers (Baltimore, Md.: Johns Hopkins University Press, 2003 [French ed. 1998]); and Hans G. Kippenberg, Discovering Religious History in the Modern Age, trans. Barbara Harshav (Prince ton, N.J.: Prince ton University Press, 2002 [German ed. 1997]).